ফরেক্স মার্কেটের মতো একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যেখানে আপনার একটি সিদ্ধান্তের আপনার লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে, সেখানে একটি সুবিন্যস্ত এবং যুক্তিনির্ভর ট্রেডিং কৌশল থাকা বাধ্যতামূলক। ফরেক্স ট্রেডিং চার্টকে যদি আপনি খালি চোখে দেখেন তাহলে তা অর্থহীন রেখা ছাড়া কিছুই মনে হবে না। চার্টকে বিশ্লেষণ করার একটি সঠিক প্রক্রিয়া থাকলে আপনার ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেকাংশে সফল হয়ে যায়।
ট্রেডিং কৌশল নির্ভর করে ট্রেডারের মানসিক অবস্থার উপর। ফরেক্স ট্রেডিং এ অনেক ধরণের ট্রেডিং কৌশল আছে। একজন ট্রেডার চাইলেই সব ধরণের ট্রেডিং কৌশল আয়ত্ত করে তার ট্রেডিং এ ব্যবহার করতে পারেন না। একজন ট্রেডারকে তার মাসনিক ক্ষমতা অনুযায়ী ট্রেডিং কৌশল নির্বাচন করা উচিত। আজকে আমরা আলোচনা করবো ফরেক্স মার্কেটে ব্যবহৃত সর্বাধিক জনপ্রিয় কিছু ফরেক্স ট্রেডিং কৌশল সম্পর্কে। যাতে আমরা সহজে নিজেদের উপযুক্ত কৌশল বাছাই করতে পারি।
মুভিং অ্যাভারেজ ক্রসওভারঃ মভিং অ্যাভারেজ ক্রসওভার কৌশল হচ্ছে মার্কেটে ট্রেন্ডের মধ্যবর্তী গতিবিধি খুঁজে বের করার একটি প্রক্রিয়া। ট্রেন্ড বলতে মূলত প্রাইস অ্যাকশন বুঝায় যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে মূল্যের একটি নির্দিষ্ট গতিবিধি বুঝায়। সাধারণত ট্রেন্ড ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী হয়। পার্শ্বাভিমুখ গতিবিধিকে একত্রীকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, ট্রেন্ড হিসেবে নয়। মার্কেটে ৭০% গতিবিধি একত্রীকরণের মধ্যে পরে এবং কেবল ৩০% গতিবিধি ট্রেন্ডের মধ্যে ধরা হয়।
স্বল্পমেয়াদী ট্রেন্ড বুঝার জন্য স্বল্পমেয়াদী মুভিং অ্যাভারেজ ব্যবহার করা যায়। মুভিং অ্যাভারেজ ক্রসওভার কৌশলটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্বল্পমেয়াদী ট্রেন্ড বুঝার জন্য লক্ষ্য রাখে, একটি স্বল্পমেয়াদী মুভিং অ্যাভারেজ একটি দীর্ঘমেয়াদী মুভিং অ্যাভারেজ এর উপরে বা নিচে ক্রস করে কিনা।
উদাহরণস্বরূপঃ যখন AUD/USD এর ৫ দিনের মুভিং অ্যাভারেজের মূল্য ২০ দিনের মুভিং অ্যাভারেজের উপরে ক্রস করে তখন এটিকে একটি স্বল্পমেয়াদী ট্রেন্ড হিসেবে গণ্য করা যায়। আপনি এই কৌশলে মুদ্রা জোড়া ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যখন দেখবেন মুভিং অ্যাভারেজ ক্রসওভার মুদ্রা জোড়ার ঊর্ধ্বমুখী ট্রেন্ডের উপর যেতে দেখা যাবে।
দীর্ঘমেয়াদী মুভিং অ্যাভারেজ আর্থিক বাজারের দীর্ঘমেয়াদী ট্রেন্ড বুঝতে সাহায করে। যখন একটি পেয়ারের/জোড়ার ২০ দিনের মুভিং অ্যাভারেজের মূল্য ৫০ দিনের মুভিং অ্যাভারেজ মূল্যের নিচে ক্রস করে, তখন বুঝতে হবে মার্কেট একটি মধযম মেয়াদি ট্রেন্ডের মধ্যে যাচ্ছে।
এই কৌশল অবলম্বন করে মার্কেটের ট্রেন্ড বুঝা যায় এবং সহজে ট্রেড করা যায়। সঠিক চার্টে ট্রেড করতে – এখানে ক্লিক করুন।
সাপোর্ট-রেসিসটেন্স ব্রেকআউট কৌশলঃ সাপোর্ট-রেসিসটেন্স ব্রেকআউট কৌশল একটি বহুল পরীক্ষিত এবং কার্যকরী ট্রেডিং কৌশল। অধিকাংশক্ষেত্রে এই কৌশল থেকে সফলতা আশা করা যায়।
মার্কেটে অনেক সময় দেখা যায় মুদ্রার মান উপরে একটি নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত পৌছে উল্টো দিকে ঘুরে যায়, আবার একিভাবে নিচের একটি লেভেল পর্যন্ত স্পর্শ করে আবার মূল্য উপরে যাওয়া শুরু করে। চার্ট ভালভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যায় একি ঘটনা মার্কেটের এর আগেও হয়েছে। চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলোঃ
উপরের চিত্রে লাল রেখা দিয়ে মার্কেটের একটি সাপোর্ট লেভেল দেখা যাচ্ছে এবং সবুজ রেখা দিয়ে রেসিসটেন্স লেভেল দেখা যাচ্ছে। মুদ্রা জোড়ার মূল্য এই দুই রেখার মধ্যে অবস্থান করছে। মুদ্রার মূল্য যদি কোনভাবে এই লেভেলকে অতিক্রম করে তাহলে ট্রেডার একটি ভাল ক্রয় অথবা বিক্রয় ট্রেন্ড পেয়ে যান। যদি সাপোর্ট লেভেল অতিক্রম করে তাহলে পেয়ার ক্রয় সিদ্ধান্ত নিতে হয় আর যদি রেসিসটেন্স লেভেল অতিক্রম করে তাহলে পেয়ার বিক্রয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নঃ ক্যাডেলস্টিক প্যাটার্ন ট্রেডিং একটি জনপ্রিয় ট্রেডিং কৌশল যা সহজ উপায়ে স্বল্পমেয়াদী ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। মার্কেট দুই ধরনের ক্যান্ডেল দেখা যায়, বুল ক্যান্ডেল এবং বিয়ার ক্যান্ডেল। বুল ক্যান্ডেলের ক্লোসিং মূল্য তার ওপেনিং মূল্যের উপরের থাকে এবং বিয়ার ক্যান্ডেলের ক্লোসিং মূল্য ওপেনিং মূল্যের নিচে থাকে। মার্কেটে বুল এবং বিয়ার ক্যান্ডেল অনেক রকমের হয়। কিছু ক্যান্ডেলের উপরের ছায়া বড়, কিছুর নিচের ছায়া বড়। কিছুর মূল শরীর (real body) বড়, কিছুর মূল শরীর ছোট ইত্যাদি। এই পার্থক্যের ভিত্তিতে কিছু উল্লেখযোগ্য ক্যান্ডেল ভাগ করা হয়েছে যা একজন ট্রেডারকে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। নিচে তা উল্লেখ করা হলোঃ
স্পিনিং টপঃ যেই ক্যান্ডেলের বড় আপার ছায়া (upper shadow) এবং লোয়ার ছায়া (lower shadow) থাকে এবং বডি ছোট হয় সেই ক্যান্ডেলকে স্পিনিং টপ বলে। এটি মূলত রিভার্স ট্রেন্ড সুচক। যা দ্বারা মার্কেট ট্রেন্ডের বিপরীতমুখী গতবিধি নির্দেশ করে।
মারোবোজুঃ মারোবোজু ক্যান্ডেলে কোনো ছায়া থাকে না। এটির পুরোটাই মূল শরীর হয়। বুলিশ মারোবোজু মার্কেটে উপরে যাওয়া নির্দেশ করে এবং বিয়ারিশ মারোবোজু মূল্যের অবনমন।
দোজিঃ দোজি ক্যান্ডেলের ওপেনিং মূল্য এবং ক্লোসিং প্রায় সমান হয়ে থাকে এবং এর মূল শরীর অনেক ছোট হয়। মার্কেটের বুলিশ অবস্থায় দোজি ক্যান্ডেল দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে এখন মূল্যে নিচে যেতে পারে এবং বিয়ারিশ অবস্থায় যদি দোজি ক্যান্ডেল দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে মূল্য উপরে যেতে পারে।
হ্যামারঃ হ্যামার হচ্ছে একটি বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন। কিন্তু হ্যামার একা মূল্য রিভার্স করার জন্য যথেষ্ট নয়। হ্যামার ক্যান্ডেল ফর্মের পরে একটা বুল ক্যান্ডেল আপনাকে রিভার্সের নিশ্চিত ধারণা দিতে পারে। হ্যামার ক্যান্ডেলে মূল শরীরের চেয়ে ছায়া ২-৩ গুন বড় হয়, এর কোন আপার ছায়া থাকবে না, মূল শরীরটা উপরে হবে।
এগুলো ছাড়াও আরো রয়েছে হ্যাঙ্গিং ম্যান, ইনভার্টেড হ্যামার, শুটিং স্টার ইত্যাদি। যারা অল্প কষ্টে এবং স্বল্পমেয়াদী ট্রেডিং করতে চান তারা এই কৌশল ব্যবহার করেন। এটিও একটি পরীক্ষিত ট্রেডিং কৌশল।
উপরে আমরা কিছু স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী ট্রেডিং কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করলাম সংক্ষিপ্তভাবে। এগুলো ছাড়াও মার্কেটে আরো অনেক পরীক্ষিত এবং কার্যকরী ট্রেডিং কৌশল রয়েছে। একজন ট্রেডারের উচিত তার মধ্য থেকে নিজের উপযুক্ত ট্রেডিং কৌশল অবলম্বন করে ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করা।
আজই ট্রেড শুরু করতে – এখানে ক্লিক করুন।