ফরেক্স ট্রেডিং সুষ্ঠ এবং সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রত্যেক ট্রেডারের উচিত কোনো নির্দিষ্ট ট্রেডিং বিশ্লেষণের ব্যবহার। আমাদের এই মার্কেটে অনেক ট্রেডার আছে যারা কেবলমাত্র আগ্রহের বশে ফরেক্স মার্কেটের সাথে যুক্ত হয়। কিন্তু তারা কোনো প্রকার নির্দিষ্ট কৌশল বা বিশ্লেষণ ব্যবহার করে না তাদের ট্রেডিং এ। এর ফলাফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেতিবাচক হয়।
ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংবাদ এবং অন্যান্য সংবাদ কিভাবে অর্থনৈতিক বাজারে প্রভাব ফেলে তা অধ্যয়ন করে। ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি দেশের অর্থনৈতিক সংবাদ, সামাজিক শক্তি, অর্থনৈতিক ঘোষণা, ফেডারেল নীতি পরিবর্তন, দেশের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আয়-ক্ষতি সংক্রান্ত খবর এবং সবচেয়ে জরুরী তথ্য যা ফরেক্স মার্কেটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশের সুদের হার ও সুদের হার নীতি ।
ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণের অন্যতম প্রধান ধারনাই হলো, যদি কোনো দেশের বর্তমান বা ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কার্যক্রম বা প্রকল্পনা দৃঢ় হয়, তবে সেই দেশের মুদ্রার মান শক্তিশালী হবে। একটি দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থা বিদেশি বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী এবং অর্থনৈতিক ট্রেডারদের আকর্ষিত করে। যার ফলে তারা ওই দেশের মুদ্রায় বিনিয়োগ করতে চায় বেশি করে। মূলত সবকিছু নির্ভর করে চাহিদা এবং যোগানের উপর। একটি দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী এবং উন্নত হওয়ার সাথে সাথে তা ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি করবে। যা মুদ্রার মানকে সচল রাখবে।
ফরেক্সের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্থনৈতিক ঘটনা এবং সংবাদঃ ফরেক্সে যাত্রা শুরু করার পূর্বে কিছু তথ্য সকল ট্রেডারদেরই জানা উচিত। ফরেক্স মার্কেটে প্রতি মাসেই অর্থনৈতিক খবর প্রকাশিত হয় এবং এর ফলে মার্কেটে সাময়িক বা দীর্ঘকালীন কিছু পরিবর্তন হয়। একজন সচেতন ট্রেডার হিসেবে আপনার জানা থাকা উচিত এইসব খবর কখন প্রকাশিত হচ্ছে, যাতে আপনি মার্কেটের আকস্মিক পরিবর্তনের সময় ট্রেডিং থেকে বিরত থাকতে পারেন অথবা সতর্ক থাকতে পারেন। এখন আমরা আলোচনা করবো ফরেক্স মার্কেটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফান্ডামেন্টাল খবর সম্পর্কে।
গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি): দেশের মোট উৎপাদনের রিপোর্টকে বলা হয় গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট রিপোর্ট। ফরেক্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সুচকের মধ্যে এটি একটি। একটি দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি জানা যায় এই রিপোর্টের মাধ্যমে। ফরেক্স মার্কেটের একদিনকে চার ভাগে ভাগ করলে, দিনের শেষ ভাগে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। যেখানে দিনের পূর্বের তিন চতুর্থাংশের কার্যকলাপ প্রতিফলিত হয়। এর মাধ্যমে একটি দেশের অর্থনীতি দ্বারা উৎপাদিত মোট পণ্য এবং সেবার মান প্রকাশ পায়।
ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) : মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপের জন্য সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত রিপোর্ট হচ্ছে এই সিপিআই রিপোর্ট। সিপিআই একটি পরিমাপ যা গ্রাহকের ব্যবহৃত পণ্য এবং সেবা (যেমনঃ পরিবহন, খাদ্য, চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি) ব্যবহারের একক। এটি প্রতিমাসের ১৫ তারিখ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে আপনি গ্রাহকের পণ্য এবং সেবা গ্রহনের মাসিক পরিবর্তনের মূল্য বুঝতে পারবেন।
বাণিজ্য ভারসাম্য বা ট্রেড ব্যালেন্সঃ বাণিজ্য ভারসাম্য হচ্ছে স্পর্শনীয় পণ্য এবং সেবার আমদানি-রপ্তানির মধ্যে পার্থক্যের একটি পরিমাপ। ফরেক্স মার্কেটে একটি দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্যের এবং আমদানি-রপ্তানির পরিবর্তনের উপর কড়া নজর দেওয়া হয়। এটি দেশের অর্থনৈতিক শক্তির সূচক হিসেবে কাজ করে। একটি দেশের মোট আমদানির চেয়ে মোট রপ্তানি বেশি হওয়া উচিত, যাতে বুঝা যায় ওই দেশের উৎপাদন খাত শক্তিশালী।
প্রযোজক মূল্য সূচক (পিপিআই): সিপিআই রিপোর্টের মতো এটিও মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপের একটি অন্যতম সূচক। এর মাধ্যমে একটি দেশের পাইকারি পর্যায়ের পণ্যের মূল্য পরিমাপ করা হয়। এই রিপোর্টটি প্রতি মাসের ২য় সপ্তাহ পূর্ণের দিন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে আগের মাসের তথ্য প্রতিফলিত হয়। সিপিআই রিপোর্টে যেখানে একটি পণ্যের একক ক্রয়ের মূল্য বুঝা যায়, সেখানে পিপিআই রিপোর্ট দেখায় একটি পণ্যের একক বিক্রয় প্রতি প্রযোজকরা কি পরিমাণ মূল্য পাচ্ছে। সিপিআই এবং পিপিআই রিপোর্ট উভয়ই একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত।
কর্মসংস্থান সূচকঃ এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাটি প্রকাশিত হয় প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে। এই ঘোষণায় বেকারত্বের হার অন্তর্ভুক্ত; যা বেকার হয়ে যাওয়া কর্মশক্তির শতকরা শতাংশ, নতুন চাকরির সংখ্যা, প্রতি সপ্তাহে ঘণ্টা প্রতি কাজের গড় এবং ঘণ্টা প্রতি গড় আয় প্রকাশ করে। এই রিপোর্টের ফলে মার্কেটে ভালই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই রিপোর্টের মধ্যে “এনএফপি”(NFP) রিপোর্টও অন্তর্ভুক্ত যাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান(NON-FARM EMPLOYMENT) রিপোর্ট বলা হয়। এই রিপোর্টকে ফরেক্স ট্রেডিং এ একটু গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট হিসেবে ধরা হয়।
ডিউরেবল গুডস অর্ডারঃ এই রিপোর্টের মাধ্যমে প্রকাশ পাই গ্রাহকরা দীর্ঘমেয়াদী পণ্যের জন্য কি পরিমাণ অর্থ খরচ করছে। এই রিপোর্টের ওইসমস্ত পণ্য গণ্য করা হয়, যার মেয়াদ কমপক্ষে তিন বছর হয়।
খুচরা বিক্রয় সূচকঃ এর মাধ্যমে একটি দেশের খুচরা খাতে কি পরিমাণের পণ্য আদান প্রদান হয়েছে তা জানা যায়।
সুদের হারঃ ফরেক্সের অন্যতম মূল চালিকা শক্তি হলো মুদ্রার সুদের হার। ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি অর্থনীতির সার্বিক অবস্থার পরিমাপের জন্য উপরের উল্লিখিত সমস্ত অর্থনৈতিক সুচকের উপর কড়া নজর রাখে। ফেডারেল কমিটি সুদের হার বাড়ানো, কমানো অথবা পরিবর্তিত রাখতে উপরের সুচক গুলো ব্যবহার করতে পারে এবং করে। এজন্যই ফরেক্স ট্রেডিং করার সময় আমাদের সুদের হার জানা থাকা উচিত। সুদের হারের পাশাপাশি উপরুক্ত সুচক গুলোও নজর রাখা ভাল। সকল ধরনের ফান্ডামেন্টাল সংবাদ সহজে পেতে- এখানে ক্লিক করুন।
ফরেক্স ট্রেডিং এর সঠিক মূল্যায়নের জন্য এইসমস্ত অর্থনৈতিক সুচকের পাশাপাশি কিছু ব্যক্তিগত রিপোর্টও আছে। আপনি যদি শুধু রিপোর্টের সংখ্যার দিকে মনোনিবেশ করেন তাহলে আপনার সময় অপচয় ছাড়া কিছুই হবে। সংখ্যার পাশাপাশি বুঝতে এই সংখ্যাগুলো একটি দেশের অর্থনীতিকে কিভাবে প্রভাবিত করছে। সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে, এই সূচকগুলো কোন মুদ্রা ব্যবসায়ীর জন্য অমূল্য সম্পদ হতে পারে।
আজই ট্রেড শুরু করতে – এখানে ক্লিক করুন