প্রত্যেক ফরেক্স ট্রেডারই চায় কিভাবে ট্রেন্ড সনাক্ত এবং তার আপেক্ষিক শক্তি নির্ধারণ করা যায় তা জানতে। কারণ ফরেক্স মার্কেটে একটি কথা প্রচলিত আছে, ট্রেন্ড ইজ ইউর ফ্রেন্ড অর্থাৎ ট্রেন্ডই হচ্ছে আমাদের প্রকৃত বন্ধু। ট্রেন্ড সনাক্ত করে ট্রেডিং করা অনেকটা স্রোতের অনুকূলে ভাসার মতো, যেখানে আপনি অনেক কম পরিশ্রমের অধিক পথ অতিক্রান্ত করতে পারবেন। দুর্ভাগ্যবশত, ট্রেন্ডের শক্তি মূল্যায়ন করা কিন্তু সহজ কাজ না।
অনেক ট্রেডার ট্রেন্ড বুঝার জন্য অনেক রকমের ইনডিকেটরস এবং টেকনিক ব্যবহার করে বিষয়টিকে অনেক জটিল করে ফেলে। ট্রেন্ড সনাক্ত করা সহজ যদি আপনি সঠিক কৌশল এবং টুলস ব্যবহার করতে পারেন। আজকে আমরা তিনটি কার্যকরী কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো ভালোভাবে অনুশীলন করলে একজন ট্রেডার অনেক সহজে ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
ট্রেন্ডিং মার্কেটের বৈশিষ্ট্যঃ ট্রেন্ড সনাক্তকরণ অথবা এর শক্তি যাচাই করা পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন ট্রেন্ডিং মার্কেট কিভাবে চিহ্নিত করা যায়। যা করা অত্যন্ত সহজ একটি কাজ। ট্রেন্ডিং মার্কেটে হচ্ছে যেখানে হাইয়ার-হাই (Higher highs) কে হাইয়ার-লোস (Higher Lows) অনুসরণ করে অথবা লোয়ার-লোস (Lower Lows) কে লোয়ার হাই (Lower Highs) অনুসরণ করে। নিম্নে চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো।
ট্রেন্ডিং মার্কেট অনুধাবন করা কতো সহজ তা আমরা উপরের চিত্রের মাধ্যমে দেখতে পেলাম। কিন্তু ট্রেন্ড কোনদিকে আছে এবং এর শক্তি নির্ধারণ করা অতোটা সহজ কাজ নয়। এখন আমরা আলোচনা করবো কৌশল সম্পর্কে।
হাই এবং লো অনুসরণ করুনঃ পেওথম কৌশলটি অনেক সহজ এবং কার্যকরী কৌশল, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারবো ট্রেন্ড কিভাবে পরিবর্তন হয় অথবা ট্রেন্ড কি আসলেই পরিবর্তন হয়েছে কিনা? প্রথমেই আমাদের চলমান চার্টে দীর্ঘসময় ধরে গঠন করে আসা চার্টের হাই এবং লো এর মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে হবে। ট্রেন্ডের একটি নিজস্ব গতি আছে এবং এটি পরিবর্তন হলে কিভাবে বুঝ যায় তা একটি চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো।
উপরের চিত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি মার্কেট প্রথমে আপ-ট্রেন্ড অবস্থায় ছিল এবং পরবর্তীতে ডাউন-ট্রেন্ডে চলে গেছে। প্রথম ৩টি হাই (Highs) যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পারি প্রথমটার চেয়ে দ্বিতীয় এবং দ্বিতীয় হাই এর চেয়ে তৃতীয় হাই উপরে ছিল। অনুরূপভাবে প্রথম তিনটি লো (Lows) দেখা যাছে পর্যায়ক্রমে একে অপরের উপরে আছে। পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় চতুর্থ হাই থেকে যা তার আগের হাই থেকে নিচে ছিল। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি আপ-ট্রেন্ডের শক্তি কমা শুরু করেছে এবং এটি নিশ্চিত হয় পরবর্তী লো অর্থাৎ চতুর্থ লো এর মাধ্যমে যা পূর্বের লো এর নিচে শেষ হয়। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হয় মার্কেটের ট্রেন্ড পরিবর্তন হয়েছে। মনে রাখবেন ট্রেন্ড পরিবর্তন সবসময় সুস্পষ্ট না হলেও এর লক্ষণ সবসময় চার্টে দেখা যাবে। এই লক্ষণগুলো বুঝার জন্য আমাদের পরিশ্রম এবং অনুশীলন করে যেতে হবে।
পরবর্তী রেফারেন্সের মধ্যে দূরত্ব গণনা করাঃ প্রথম ধাপে আমরা জানতে পেরেছি কিভাবে সুইং হাই এবং লো এর মাধ্যমে ট্রেন্ডের শক্তি গণনা করা যায়। এখন এর সাথে মুখ্য লেভেলের মিশ্রণ করবো আমরা। টেকনিক্যাল বিশ্লেষকদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। সাপোর্ট-রেসিসটেন্স লেভেল এর মধ্যে যদি এক রেফারেন্স বার বার প্রতিলক্ষিত হয় তার মানে ট্রেন্ড আরো শক্তিশালী হচ্ছে। কিন্তু ধারণাটি ভুল। আমাদের দেখতে হবে এক রেফারেন্সের সাথে অন্য রেফারেন্সের দূরত্ব কতটুকু।
উপরের চিত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি মার্কেট একটি নির্দিষ্ট সাপোর্ট মেনে চলছিল অনেকক্ষণ ধরে। কিন্তু একটু ভাল করে পর্যবেক্ষণ করলে আপনি দেখবেন রিটেস্টের (Retest) মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ ছোট হয়ে গেছে এবং একসময় এসে সাপোর্ট লেভেল ভেঙ্গে গেছে। এর মাধ্যমে আমরা একটি ট্রেন্ডের শক্তি কিভাবে কমছে তা বুঝতে পারবো এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করতে পারবো। এখন মার্কেটের লাইভ চিত্র দিয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টি আবার দেখা যাক।
লাইভ মার্কেটের চার্টে দেখতে পাচ্ছি রিটেস্টের দূরত্ব ক্রমশ কমতে কমতে একসময় সাপোর্ট লেভেল ভেঙ্গে ফেলেছে। (দূরত্ব বাদামী, নীল এবং সবুজ রঙের মাধ্যমে দেখানো হলো)
ভারী প্রাইস অ্যাকশনঃ মাঝেমাঝে মুখ্য লেভেলের কাছাকাছি ভারী মাত্রাই প্রাইস অ্যাকশন দেখা যায়। এর মাধ্যমে বুঝা যায় ট্রেন্ডের শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এই পদ্ধতিটি অনেকটা উপরের দুটি পদ্ধতির সমন্বয় বলা যায়। ভারী প্রাইস অ্যাকশন দিয়ে বুঝায় মার্কেট একটি স্বল্প সময়ের জন্য একটি মুখ্য লেভেলের উপর অবিরত চাপ প্রয়োগ করছে। যদি মার্কেটে একটি বিস্তৃত সময়ের জন্য প্রাইস অ্যাকশন গ্রুপ বা গুচ্ছ কোনো মুখ্য লেভেলকে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে তাহলে বুঝতে হবে, বর্তমান ট্রেন্ডটি ভাঙতে যাচ্ছে এবং বিপরীতদিকে ঘুরে যাবে।
উপরের কাল্পনিক চিত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিভাবে একটি সাপোর্ট লেভেলকে একগুচ্ছ প্রাইস অ্যাকশন ক্রমাগত চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ভেঙ্গে দিলো।
পরিশেষে বলা যায়, ট্রেন্ডের শক্তি নির্ধারণ খুব জটিল বিষয় না। আমরা উপরের তিনটি সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে দেখতে পেলাম কিভাবে নির্ধারণ করা যায় ট্রেন্ডের শক্তি, ট্রেন্ডের পরিবর্তন প্রভৃতি। উপরের পদ্ধতি সমূহ সবধরনের মার্কেট পসিশনে কার্যকর। সুতরাং আপনি চাইলে খুব সহজে এই পদ্ধতিগুলো অনুসরনের মাধ্যমে নিজের ট্রেডিং আরো সমৃদ্ধ করতে পারেন।
{{cta(‘8f9c01e0-e15e-4fd6-a8c7-224af439e962’)}}