ফরেক্স হচ্ছে একটি মুদ্রা বিনিময় বাজার। ফরেক্স মার্কেট বর্তমানের বিশ্বের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক তরল মুদ্রা ধারণকারী প্রতিষ্ঠান। যেখানে প্রত্যেক দিন কোটি কোটি ডলার লেনদেন হয়। ফরেক্স মার্কেট একটি বিকেন্দ্রীভূত মার্কেট, যার কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই। পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে এই মার্কেটে ট্রেড করা যায়। মুদ্রা লেনদেনের দিক থেকে এটি সবচেয়ে বৃহত্তম বাজার। যারা অনলাইনের মাধ্যমে ফরেক্সে ট্রেড করে তাদের মার্কেট দেখার উপায় হচ্ছে ফরেক্স চার্ট।
চার্টঃ চার্ট হচ্ছে একটি চার্ট প্যাকেজ যা একজন ট্রেডারকে ফরেক্স মার্কেটের মুদ্রা বিনিময় হার দেখতে দেয়। ফরেক্স চার্টগুলি ফরেক্স চার্টিং সফটওয়্যারের মধ্যে প্রদান করা হয়। এটি আপনি যেকোনো ফরেক্স ব্রোকারের সাথে ট্রেডিং একাউন্ট খোলার পর বিনামূল্যে পেতে পারেন। চার্টের মাধ্যমে ফরেক্স এর পাশাপাশি স্টক ট্রেডিংও করা সম্ভব। মার্কেট বর্তমানে অনেক রকমের চার্ট রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম হলোঃ
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং পরিচিত চার্টের সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হবে। সবধরনের চার্ট সম্বলিত প্ল্যাটফর্মে ট্রেড করতে- এখানে ক্লিক করুন।
লাইন চার্টঃ লাইন চার্টের মাধ্যমে আমরা ফরেক্স মার্কেটের সার্বিক বাজার প্রবণতা/ট্রেন্ড এবং সাপোর্ট-রেসিস্টেন্স লেভেল দেখতে পারি। এই চার্টের মাধ্যমে আপনি কার্যকরীভাবে ট্রেড করতে পারবেন না কারণ এতে মুদ্রার আলাদা মূল্য বার থাকে না। আপনি যদি আপনার পছন্দের মুদ্রা জোড়ার প্রবণতা/ট্রেন্ড জানতে চান তাহলে এই চার্ট ব্যবহার করতে পারেন।
এই চার্টে মূলত লাইনের সংযোগের মাধ্যমে মূল্যের ট্রেন্ড দেখানো হয়। লাইন যুক্ত করা হয় এককালের উচ্চমূল্যের সাথে পরবর্তীকালের উচ্চমূল্যে, নিন্মমুল্যের সাথে নিন্মমুল্যের ইত্যাদির মাধ্যমে। লাইন চার্টের মধ্যে একটি সেশনের ক্লোসিং প্রাইসের সাথে অন্য সেশনের ক্লোসিং প্রাইস যুক্ত করে দেখানো হয়, কারণ ক্লোসিং প্রাইস সবচেয়ে দরকারি এবং সর্বাধিক উপকারি তথ্য। এর মাধ্যমে জানা যায় মার্কেটের বুল এবং বিয়ার যুদ্ধে কে জয়ি হয়েছে।
বার চার্টঃ বার চার্টে আমাদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মুদ্রার মূল্য বারের মাধ্যমে দেখানো হয়। আপনি যদি একদিনের চার্ট দেখেন তাহলে একদিনের মূল্যের জন্য একটি বার দেখানো হবে, ৪ ঘণ্টার চার্টে প্রতি চার ঘণ্টা হিসেবে একটি বার দেখায়, ১ ঘণ্টা চার্টে প্রতি ১ ঘণ্টা হিসেবে একটি চার্ট ইত্যাদি। আমরা আমাদের ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি বার থেকে সর্বমোট ৪ টি তথ্য পেতে পারি। বারের শুরু, উচ্চ, নিম্ন এবং বন্ধ।
ক্যান্ডেলস্টিক চার্টঃ ক্যান্ডেলস্টিক চার্টে বার চার্টের মতো তথ্য প্রদর্শন করা হয় কিন্তু এর মধ্যে গ্রাফিক এর কাজ থাকে বলে এতে ট্রেড করতে ট্রেডারদের ভাল লাগে। এই চার্টে বার চার্টের মতো উচ্চ এবং নিম্ন প্রাইস দেখানো হয় ভারটিকাল লাইনের মাধ্যমে। একটি বারে সাধারণত দুইটি ভারটিকাল লাইন থাকে, বারের উপরের লাইন কে বলা হয় উচ্চ ছায়া (upper shadow) এবং নিচের লাইনকে বলা হয় নিম্ন ছায়া (lower shadow) । উচ্চ ছায়া এবং নিম্ন ছায়াকে উইক্স (wicks) ও বলা হয়ে থাকে। ক্যান্ডেনলস্টিকের এর মাঝখানে বড় ব্লকটি হচ্ছে শুরু এবং বন্ধ প্রাইস। একে বলা হয় প্রকৃত শরীর (real body)।
বর্তমান ফরেক্স ট্রেডিং এ এই তিনটি চার্ট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে ক্যাডেলস্টিক চার্ট।
চার্ট কিভাবে বিশ্লেষণ করা যায়ঃ
সাধারণত টেকনিক্যাল বিশ্লেষকরাই চার্ট বিশ্লেষণ করে থাকে। চার্ট বিশ্লেষণ করার নানাবিদ উপায় আছে। আমরা তারমধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য উপায় আলোচনা করবো।
ক্যাডেলস্টিক প্যাটার্ন বিশ্লেষণঃ ক্যান্ডেলস্টিক চার্টের মাধ্যমে এই বিশ্লেষণ করা হয়। এই চার্টগুলো একধরণের টেকনিক্যাল টুলস এর মতো একাধিক টাইম ফ্রেমের তথ্য একক প্রাইস বারে দেখায়। এর মাধ্যমে চিরাচরিত শুরু-উচ্চ (open-high), নিম্ন-বন্ধ (low-close), সহজ লাইন যা ক্লোসিং প্রাইসের ডটের সাথে যুক্ত করে ট্রেড করা থেকে অনেক সহজ উপায়ে ট্রেড করা যায়। ক্যান্ডেলস্টিক একধরনের প্যাটার্ন তৈরি করে যা প্রাইস এর দিকনির্দেশনা বুঝতে সাহায্য করে। এইভাবে ট্রেড করা যায় তা প্রথম পশ্চিমা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন স্টিভ নিসন তার জনপ্রিয় বই “জাপানিস ক্যামডেলস্টিক চার্টিং টেকনিকস” বইটিতে যা প্রকাশ পায় ১৯৯১ সালে। এখন খুব সহজেই কিছু প্যাটার্ন আছে যা শনাক্ত করা যায়, যেমনঃ বিয়ারিশ ব্ল্যাক ডার্ক ক্লাউড কভার (bearish dark cloud cover) ইভিনিং স্টার, থ্রি ব্ল্যাক ক্রো (three black crows) , এছাড়াও একক বারের কিছু প্যাটার্ন নির্ণয় করা হয়েছে, যেমনঃ ডজি, হ্যামার ইত্যাদি যা স্বল্প দৈর্ঘ্য ট্রেডিং এর জন্য উপকারি। ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন বিশ্লেষণের উল্লেখযোগ্য কিছু প্যাটার্ন রয়েছে যা অধিকাংশ ট্রেডার সফলতার সাথে ট্রেড করতে ব্যবহার করে।
ইনডিকেটর ট্রেডিংঃ ইনডিকেটর মার্কেটের মূল্যের তথ্যের উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য ক্রয়-বিক্রয় অবস্থার জানান দেই। ইনডিকেটর ট্রেডিং একটি স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং প্রক্রিয়া যেখানে ট্রেডারকে নিজে থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয় না। মার্কেটে কিছু উল্লেখযোগ্য টেকনিক্যাল ইনডিকেটর আছে যা অধিকাংশ ট্রেডাররাই তাদের ট্রেডিং এ ব্যবহার করে থাকে এবং সফল হন। যেমনঃ মুভিং অ্যাভারেজ, বলিঙ্গার ব্যান্ড, এমএসিডি, পেরাবলিক এসএআর, আরএসআই ইত্যাদি।
চার্ট প্যাটার্নঃ চার্ট প্যাটার্ন ট্রেডিং এ ট্রেডাররা চার্টকে বড় আকারে দেখার চেষ্টা করে এবং ট্রেডিং সিগন্যাল ভবিষ্যৎ মূল্য পরিবর্তনের সাইন বা চিহ্ন খুঁজে। চার্ট প্যাটার্ন মূলত ধারণার উপর ভিত্তি করে করা হয়, যেখানে কিছু প্যাটার্ন ধারাবাহিকভাবে মার্কেটে আবির্ভূত হয় এবং এর পরবর্তী ফলাফলও অতীতের মতো হওয়ার আশাবাদ রাখে। চার্ট প্যাটার্ন এর একটি প্রতিষ্ঠিত সংজ্ঞা এবং মানদণ্ড আছে। তবে কোনও প্যাটার্নই শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারে না। কিছু উল্লেখযোগ্য চার্ট প্যাটার্ন এর বর্ণনা দেওয়া হলো।
ডাবল টপ অথবা ডাবল বটমঃ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের মধ্যে এই দুটি চিত্র প্রায়শই দেখা যায়। ডাবল টপ এবং ডাবল বটম উভয়ই রিভারসাল সিগন্যাল দিয়ে থাকে।
মার্কেটের এমন রুপ দেখা গেলে ধারণা করা হয় মুদ্রার মূল্য বিপরীত দিকে যাবে।
হেড এন্ড শোল্ডারঃ হেড এন্ড শোল্ডার একটি কার্যকরী ট্রেডিং সিস্টেম যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফলভাবে কাজ করে ফরেক্স মার্কেটে। এই ধরণের নামকরণের কারণ হচ্ছে এই প্যাটার্নে একটি বড় টপ থাকে এবং অপেক্ষাকৃত দুটি ছোট টপ থাকে। বড় টপকে হেড বলা হয় এবং ছোট টপগুলোকে শোল্ডার বলা হয়। এটিও একটি মূল্য রিভারসাল সিগন্যাল অর্থাৎ মার্কেট উল্টো দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করে।
উপরুক্ত প্যাটার্ন ছাড়াও আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্যাটার্ন হচ্ছে কাপ এন্ড হ্যান্ডেল, ট্রায়াঙ্গেল, থ্রিপল টপ, থ্রিপল বটম ইত্যাদি।
বর্তমানে অধিকাংশ ট্রেডার চার্ট বিশ্লেষণের মাধ্যমে ট্রেডিং করে থাকেন কারণ এটি ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণের তুলনা সহজ এবং বেশি কার্যকরী। সুতরাং আপনি যদি চান সহজ উপায়ে ট্রেড করতে তাহলে চার্ট বিশ্লেষণ ভাবভাবে শিখে নিজের ট্রেডিংকে করতে পারেন উন্নত।
আজই ফ্রিতে চার্ট এনালাইসিস শুরু করতে – এখানে ক্লিক করুন।